
আলামিন সরদার। ফাজিল পাশ করে চাকরির নে'শায় ঘুরেছেন অনেকদিন। একটি মা'দরাসায় খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবেও কাজ করেছেন কয়েক বছর। কিন্তু করোনা সংক্রমণ শুরু হলে বন্ধ হয়ে যায় মা'দরাসা, সামান্য বেতনটুকুও পান না।
চলে আসেন গ্রামের বাড়িতে। বাবাকে উৎসাহিত করেন ব্যবসায়। মোড়ের বাজারে মুদির দোকান দিয়ে বসেনa। তিনিও দোকানে বসেন মাঝে মাঝে। স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামতির পাশাপাশি শখ করে কয়েকটি কোয়েল পাখি পোষতে শুরু করেন ছোট এক খাঁচায়।
আস্তে আস্তে পাখিগু'লো বড় হয় ডিম দেয়। আলামিন দিনে দিনে তাদের প্রতি মুগ্ধ হয়। গভীর ভালোবাসা তৈরি হয় পাখিদের প্রতি। আস্তে আস্তে আরো পাখি কিনে আনে সে। নিজেই তৈরি করে দোতলা, তিনতলা পাখির বাসা। বর্তমানে তার একটি দোতলা ও একটি তিনতলা কোয়েল পাখির বাসায় প্রায় ৯ শত কোয়েল পাখি আছে। পাখিদের দেখাশোনা আর ইমামতি করেই কাটে সারাদিন।
পাখিদের খাবার দেওয়া, ডিম সংগ্রহ করা, ময়লা পাত্র পরিষ্কার করা, বাসা টিকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, প্রয়োজনে ওষুধ খাওয়ানো, ডিমগু'লো বাজারে 'বিক্রি করা এসবেই কে'টে যায় সময়।
কোয়েল পাখির খামা'র ও ডিম
সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে মূল বসতঘরের পাশে বিশালাকৃতির দুইটি খাঁচা একত্রে রাখা হয়েছে। খাঁচাগু'লো বিশেষ উপায়ে তৈরি। যেকোনো সময় যেকোনো পাশে খাঁচার পার্টগু'লো খুলে খাবার দেওয়া যায়, আর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা যায়। দুর্বল, রোগাক্রা'ন্ত পাখিদের জন্য একটি খোপ আলাদা রাখা আছে। কোনো কোয়েল দুর্বল বা অ'সুস্থ হলে আলাদা খোপে রেখে চিকিৎসা করা হয়।
তাছাড়া নতুন পাখি, পু’রুষ পাখি তাদের জন্যও আলাদা খোপ আছে। নতুন পাখিদের প্রথমে কয়েকদিন আলাদা রেখে এই পরিস্থিতির সঙ্গে অভ্যস্থ করে মূল খোপে রাখা হয়। মূল খাঁচায় এ সময় প্রায় ৭০-৮০ টি ডিম এদিক সেদিক পড়ে আছে দেখা যায়। এ সময় আলামিনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, শখ থেকেই শুরু করেছিলাম কোয়েল পাখি পালন। তবে বর্তমানে শখ ও অর্থ উপার্জন দুটোই হচ্ছে। দিনে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ ডিম পাই। এগু'লো নিকটবর্তী পোড়াদিয়া বাজার, শেখের বাজার, বেলাব বাজারসহ মোড়ের দোকানগু'লোতে ও 'বিক্রি করি। প্রতি হালি ডিম ১০-১২ টাকায় 'বিক্রি হয়। দৈনিক ৫ শত থেকে ৭ শত টাকা উপার্জন হয়। আমা'র স্বপ্ন আমি কয়েক হাজার কোয়েল পাখির একটি খামা'র গড়ে তুলবো। কারণ, এর খরচ কম উপার্জন বেশি। আমি এতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করি। এই কোয়েল পাখি আমা'র বেকারত্ব দূর করেছে পাশাপাশি আয়ের নিশ্চিত পথ পেয়েছি।
আলামিনের কাছ থেকে জানা যায় একটি কোয়েল দিনে ২০-২৫ গ্রাম খাবার খায়। একটি কোয়েল বছরে ২০০ থেকে ২৫০টি ডিম দেয়। তাদের রোগবালাই কম তাছাড়া তারা স্থান নোং'রা করে কম। একটি মুরগির জায়গায় ৮ থেকে ১০টি কোয়েল পালন করা যায়।
আলামিনের কোয়েল পাখির খামা'র
তিনি আরো জানান, আগামী মাস থেকে তার আরো ২০০ থেকে ২৫০টি কোয়েল ডিম দিবে। তখন দৈনিক ৪৫০ থেকে ৫০০ টি ডিম 'বিক্রি করবে। পাখিগু'লো তার টাকার মেশিন।
আলামিনের এ উদ্যোগ ও সফলতা এলাকার বেকারদের মধ্যে একটা বিরাট সাড়া ফেলেছে। তারাও তার পরামর'্শে গড়ে তুলছে এমন খামা'র।
আলামীন জানান, যদি সরকারি সহায়তা, ঋণ বা প্রণোদনা পাওয়া গেলে আরো বেশি বেকাররা উদ্যোক্তা হিসেবে কোয়েল খামা'র করার পক্ষে উৎসাহিত 'হতো।