লাশের শেষ চিহ্ন রঙ-বেরঙের টুকরো কাপড়

নরসিংদী রেলওয়ে পু'লিশ ফাঁ'ড়ির ডোম আব্দুল লতিফ সরকার। তার কাজ শুধু রেললাইনের সীমনায় নরসিংদী অংশে ট্রেনে দু'র্ঘটনা বা রেললাইনের দুপাশে পড়ে থাকা মানুষের লা'শ উ'দ্ধার করে মর'্গে নিয়ে যাওয়া ও দা'ফন সম্পন্ন করা। বিগত প্রায় ১৬ বছর ধরে নরসিংদীতে ট্রেনে কা'টা অজ্ঞাত লা'শ কবর দিচ্ছেন তিনি।
ডোম আবদুল লতিফ সরকার জানান, বিগত ১৬ বছরে এ রেলওয়ে কবরস্থানে প্রায় হাজার খানেক ট্রেনে কা'টা অজ্ঞাত পরিচয় লা'শ কবর দেওয়া হয়েছে।

অ’পরদিকে নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর'্গ সূত্রে জানা গেছে, শুধুমাত্র চলতি বছরেই এখন পর্যন্ত মোট ২৫টির অধিক অজ্ঞাত পরিচয় লা'শ পাওয়া গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনের উত্তর পাশে প্রায় ছয় শতাংশ জায়গাজুড়ে বেশ কিছু কৃষ্ণচূড়া গাছ। সেই ছোটবড় কয়েকটা গাছের ডালে ঝুলানো রয়েছে রঙ-রঙের কাপড়ের টুকরো। অনেকেই মনে করেন এগু'লো মনে হয় বস্তিবাসীরা রোদে শুকাতে এভাবে কাপড় শুকায়। আসলে এগু'লো জীবিত কারো কাপড় নয়, এগু'লো নরসিংদী এলকার রেলওয়ের সীমানা ও পাশের জেলা কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় বিভিন্ন সময়ে ট্রেনে কা'টা পড়ে মা'রা যাওয়া অজ্ঞাত পরিচয়দের পরনে থাকা সর্বশেষ কাপড়ের অংশ বিশেষ। রেললাইনে কা'টা পড়ে যেসব লা'শের কোনো পরিচয় না পাওয়া যায় না তাদের এখানে কবর দেওয়া হয়।

স্থানীয়দের অ'ভিযোগ, নরসিংদীতে রেলে কা'টা পড়ে যারা মা'রা যান, তাদের এখানে কবর দেওয়ার নামে মাটিচা’পা দেওয়া হচ্ছে। কোনো প্রকার কাফন, জানাজা এবং চাটাই ছাড়াই গর্ত খুঁড়ে মাটিচা’পা দেওয়া হয় এখানকার ডোমের সাহায্যে। মাটিচা’পা দেওয়ার ফলে কোনো চিহ্ন না রাখায় তাদের স্বজনরা এসে পরবর্তীতে লা'শের কবরও খুঁজে পান না।

আশিক নামে রেলওয়ে এলাকার এক বাসি'ন্দা জানান, বি'ষয়টা খুবই অমান'বিক। মাটিচা’পা বা কবর যেটাই বলা হোক না কেনো, শেষ কোনো চিহ্ন রাখা হয় না। বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে ট্রেনে কা'টা অজ্ঞাত লা'শ আসে। আসলে ট্রেনে কা'টা নাকি কেউ মে'রে রেললাইনে ফেলে রখেছে তা কেউ জানে না। তাৎক্ষণিক খোঁজ না মিললেও কিছুদিন যাওয়ার পর কিছু কিছু লা'শের সন্ধান মেলে। তখন নি'হতের স্বজনরা এসে লা'শ নিতে চাইলে কিংবা কবরটা দেখতে চাইলে শনাক্ত করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। দেখে বুঝার ব্যবস্থা নেই কোনটা কার কবর।

তিনি আরো বলেন, কোনো অজ্ঞাত লা'শ মাটি চা’পা দেয়ার আগে লা'শের ছবি বা সর্বশেষ পরনে থাকা কাপড় আলামত হিসেবে রেখে দেওয়া হয় বলে শুনেছি। এমন অনেক অ'ভিযোগ পাওয়া গেছে যে কবরস্থানে এসে স্বজনরা আর কবর চিহ্নিত করতে পারেনা। রেল কর্তৃপক্ষও দেখাতে ব্য'র্থ হয় কোনটা কার কবর। যার ফলে নি'হতের স্বজনরা কান্নাকাটি করে ফিরে যান। স্থানীয়দের দাবি এই কবরস্থানের জায়গাটা দেয়াল নির্মাণের মাধ্যেমে সুন্দর করে কবরগু'লো দীর্ঘদিন চিহ্নিত করে রাখার ব্যবস্থা করা।

Interesting For You

রেললাইনের পাশে কবির মিয়া নামে এক দোকানদার জানান, এ কবরস্থানের পাশেই তিনি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসছেন। প্রায়ই দেখেন ট্রেনে কা'টা অজ্ঞাত লা'শ নিয়ে আসে এখানে। এগু'লো কোনো প্রকার দা'ফন কাফন, জানাজা, বাঁশ-চাটাই ছাড়াই কোনো রকমে মাটি চা’পা দেওয়া হয়। এখানকার অধিকাংশ লা'শেরই সন্ধান মেলে না। আবার সন্ধান পেলেও কবর চিহ্নিত করা সম্ভব হয় না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মৃ'ত্যুর কারণওটা জানা সম্ভব হয় না।

নরসিংদী রেলওয়ে পু'লিশ ফাঁ'ড়ির ডোম আবদুল লতিফ সরকার জানান, তিনি প্রতি লা'শ দা'ফনের জন্য ১২শ টাকা পান। মৃ'ত্যুর পর লা'শগু'লা পড়ে থাকে। সবাই দেখতে আসে কিন্তু কেউ সহায়তায় এগিয়ে আসে না। তিনি কাউকে বলে কয়েক সঙ্গে নিয়ে লা'শটি মর'্গে নিয়ে যান। ভ্যানভাড়া ও সঙ্গের লোককে টাকা দিতে হয়। কাফনের কাপড় কিনে, বাঁশ-চাটাই, আগরবাতি, আতর ই'ত্যাদি কিনে দা'ফন করতে গিয়ে প্রায় আড়াই হাজার টাকার মতো খরচ হয়। ১২০০ টাকার জায়গায় আড়াই হাজার টাকা তিনি পাবেন কোথায়। লা'শ দা'ফনের সময় কেউ দয়া করে কিছু টাকা দিলে হয়তো কাপড় কিনে ভালো মতো দা'ফন কাফন করে মাটি দিতে পারেন। তা না হলে পু'লিশ যে বডিব্যাগ দেন সেই বডিব্যাগে ভরেই মাটিচা’পা দেন। এছাড়া কবরস্থানের জায়গাটা সুবিধার না হওয়ায় কবর দিলে চিহ্ন রাখা সম্ভব নয়।

নরসিংদী রেলওয়ে পু'লিশ ফাঁ'ড়ির ইনচার্জ (এস আই) ইমায়েদুল জাহেদী বলেন, এখানে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের কোনো শাখা না থাকায় এসব অজ্ঞাত লা'শ দা'ফন-কাফনে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। বাধ্য হয়ে রেললাইনের পাশের জায়গাটাতে দা'ফন করতে হচ্ছে। জায়গাটা অরক্ষিত, কোনো দেয়াল বা ব্লক নেই। অন্যদিকে বেশিরভাগ লা'শেরিই পরিচয় পাওয়া যায় না। পরিচয় মিললে পরিবারের কাছেই লা'শ হস্তান্তর করা সম্ভব 'হতো।

নরসিংদী রেলওয়ের সীমানা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে ভৈরব রেলওয়ে পু'লিশ ফাঁ'ড়ি। লা'শ প্রতি বাজেট কতো থাকে জানতে চাইলে ভৈরব রেলওয়ে পু'লিশের ভারপ্রা'প্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদাউস আহমেদ জানান, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ শুধু ১২শ টাকা দেয়। এটা দিয়েই লা'শ দা'ফনের কাজ শেষ করতে হচ্ছে।

নরসিংদীর অতিরিক্ত পু'লিশ সুপার (প্রশাসন) ইনামুল হক সাগর রেলওয়ের অজ্ঞাত লা'শের পরিচয় শনাক্তের বি'ষয়ে জানান, পু'লিশ অজ্ঞাত লা'শ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার ছবি তুলে সারাদেশের প্রতিটি পু'লিশ স্টেশনে জানিয়ে দেওয়া হয়। আঙুলের ছাপ সংগ্রহ ও ডিএনএ স্যাম্পল রাখা হয়। কোনো কোনো সময় লা'শগু'লো 'বিকৃত হয়ে গেলে নমুনা সংগ্রহ করে পরিচয় বের করা ক'ষ্টকর হয়ে যায়। আবার অনেক পরিবার তেমনভাবে খোঁজাখুজি করেও না। তারপরও পু'লিশ মৃ'ত্যুর সঠিক কারণ খুঁজে বের করার চে'ষ্টা করেন।

রেলওয়ের কবরস্থান দেয়াল নির্মাণের বি'ষয়ে কিছু করা যায় কিনা সে বি'ষয়ে দেখার কথা ব্যক্ত করেন পু'লিশের এ কর্মকর্তা।