
চিত্রনায়িকা পরীমণি কারা'গার থেকে মুক্তি পেয়েছেন সবে ১২ দিন। কাছের মানুষজনের সঙ্গে উপভোগ করছেন মুক্ত জীবন। এরই মধ্যে নির্মাতা ইফতেখার শুভর ‘মুখোশ’ সিনেমা'র ডাবিংয়ে অংশ নিয়েছেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ তাকে দেখা গেলো রাজধানীর একটি হাসপাতালে।
রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) 'বিকালে ফেসবুকে একাধিক ছবি পোস্ট করেন পরীমণি। যেগু'লো তোলা হয়েছে বসুন্ধ’রা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত এভারকেয়ার হাসপাতালে।
শারীরিক অ'সুস্থতার কারণে প্রায়ই হাসপাতালে ছুটতে হয় তাকে। ভার্টিগো নামের একটি রোগে আ'ক্রা'ন্ত তিনি। অনেক দিন ধরেই রোগটি তাকে ভোগাচ্ছে। এ জন্য ভারতে গিয়ে পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়েছেন নায়িকা। কিন্তু পুরোপুরি আরোগ্য লাভ করতে পারেননি।
ফলে অনেকেরই জানার ইচ্ছে, ‘ভার্টিগো’ রোগ আসলে কী? বিশেষজ্ঞদের মতে, ভার্টিগো হলো এক ধরনের মাথা ঘোরা অনুভূ'ত ি। যেখানে আপনার মনে হবে যে আপনার চারপাশের সবকিছু ঘুরছে অথবা আপনার এটাও মনে 'হতে পারে আপনি স্থির কোনো কিছুর চারপাশে ঘুরছেন। এছাড়া বমিবমি ভাব অথবা ডাবল ভিশন (একটি জিনিসকে দুটি দেখা) 'হতে পারে। কিছু লোকের শ্রবণশক্তিও হ্রাস পায়, আবার ভার্টিগোর কারণের ওপর ভিত্তি করে কানে অ'স্বাভা'বিক শব্দও 'হতে পারে।
তবে ভার্টিগো কোনো রোগ নয় বরং এটি রোগের উপসর্গ। শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার কারণে ভার্টিগো 'হতে পারে। খুব অল্প সময়ের জন্য হলেও ভার্টিগোর সমস্যা খুবই ভোগাতে পারে। এই সমস্যার জন্য যে কোনো মুহূর্তে যে কেউ অ'সুস্থ বোধ করতে পারেন। ভার্টিগোর স্থায়িত্ব কারণের ওপর নির্ভর করে। সাধারণ কারণের ক্ষেত্রে এটি কয়েক মিনিট থাকতে পারে, অন্যান্য কারণের ক্ষেত্রে ভার্টিগো কয়েক ঘণ্টা, কয়েক দিন অথবা কয়েক স'প্ত াহ পর্যন্ত থাকতে পারে।
তাই কি কারণে ভার্টিগো হচ্ছে তা খুঁজে বের করা গু'রুত্বপূর্ণ। তবে ভার্টিগোর চিকিৎসায় যে সমস্যার কারণে ভার্টিগো হচ্ছে তার নিরাময় হবে এমন কোনো কথা নেই।
ভার্টিগো সাধারণত দুই ক্যাটাগরির হয়। পেরিফেরাল ও সেন্ট্রাল। এর মানে হচ্ছে, এই সমস্যার উৎস আপনার অন্তঃকর্ণ (পেরিফেরাল) অথবা এই সমস্যা আপনার স্নায়ুতন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত (সেন্ট্রাল)। প্রত্যেকটি ক্যাটাগরির কয়েকটি সাব-ক্যাটাগরি রয়েছে। সাধারণত রোগীদের মাঝে সেন্ট্রাল ভার্টিগোর তুলনায় পেরিফেরাল ভার্টিগো বেশি প্রকাশ পায়।
যুক্তরা'ষ্ট্রের দ্য কলোনি ইআর হসপিটালের ইমা'র্জেন্সি ফিজিশিয়ান ডেরেক বেনেটসেন বলেন, পেরিফেরাল ভার্টিগোর সর্বাধিক কমন কারণ হচ্ছে বিনাইন প্যারোক্সিসমাল পজিশনাল ভার্টিগো (বিপিপিভি)। বিপিপিভির একটি সম্ভাব্য কারণ হচ্ছে অন্তঃকর্ণে ক্যালসিয়াম জমা, কিন্তু প্রায়ক্ষেত্রে এই সমস্যার উৎস স্প'ষ্ট নয়। বিপিপিভি কয়েক সেকেন্ড বা কয়েক মিনিট স্থায়ী 'হতে পারে এবং প্রায়ক্ষেত্রে মাসে মাসে এর পুনরাবৃত্তি ঘটে। বিপিপিভির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত মাথা ঘোরা হালকা থেকে তীব্র 'হতে পারে এবং হঠাৎ মস্তিষ্কের মুভমেন্ট দ্বারা এটি প্ররোচিত 'হতে পারে, যেমন- মাথা নাড়ানো।
বিপিপিভির লোকেরা দ্রুত মাথার অবস্থান পরিবর্তন করার সময় ভার্টিগো অনুভব করতে পারে, যেমন- বিছানায় শোয়ার অবস্থান পরিবর্তন করা। তাদের চোখ দ্রুত নড়াচড়াও করতে পারে, যাকে নিস্ট্যাগমাস বলে। শোয়া থেকে বসা, বসার পরে শোয়া অথবা দাঁড়ানো এ ধরনের ভার্টিগো সৃ'ষ্টি করতে পারে। মায়ো ক্লিনিকের তথ্যানুসারে, বিপিপিভি পু’রুষদের চেয়ে নারীদের বেশি হয়।
পেরিফেরাল ভার্টিগোর আরেকটি কারণ হলো ভেস্টিবুলার নিউরাইটিস। কানের ভিতরের অংশে ইনফেকশন হলে এটি হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে কানে জ্বা'লাভাব অনুভব 'হতে পারে এবং নার্ভাস সিস্টেমে এর প্রভাব পড়ে। যার ফলে শারীরিক ভারসাম্যে সমস্যা হয়।
অ’পরদিকে, মাথায় কোনোভাবে চোট পেলে বা কোনো রোগের জন্য ব্রেন স্টেম বা ব্রেনের পেছন দিকে পরিবর্তন হলে অথবা স্ট্রোক করলে সেন্ট্রাল ভার্টিগো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ভার্টিগো হলে কি করবেন?
যখন আপনার ভার্টিগো হবে, কোনো স্থানে স্থির হয়ে বিশ্রাম নিন। বিশেষজ্ঞদের মতে, তীব্র ভার্টিগোর ক্ষেত্রে অ্যাকিউট এপিসোড থিতিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত বেড রেস্ট প্রয়োজন 'হতে পারে। তীব্র ভার্টিগোর ক্ষেত্রে হাঁটার চে'ষ্টা করলে পড়ে গিয়ে মা'রাত্মকভাবে আ'হত 'হতে পারেন। সুতরাং যথাসম্ভব অবস্থান পরিবর্তন না করার চে'ষ্টা করুন।
অত্যধিক নিউরোলজিক স্টিমিউল্যান্ট (যেমন- অত্যধিক আলো ও শব্দ) হ্রাস করলে উপকার পাবেন। কিছু ওষুধ ভার্টিগোর উপসর্গ উপশম করতে পারে। ওষুধ ছাড়াও কিছু ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন 'হতে পারে। অনেক সময় অ'স্ত্রোপচারেরও দরকার হয়। সুতরাং ভার্টিগো রোগে আ'ক্রা'ন্ত ব্যক্তিকে অবশ্যই একজন নাক, কান ও গলা রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর'্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া উচিত।
মেনে চলতে হবে আরো কিছু বি'ষয়
'' উঁচু কোনও জায়গা থেকে খুব নিচু জায়গা না দেখাই ভালো। মাথা সব সময়ে একটু উঁচু করে রাখলে উপশম মিলতে পারে।
'' বসা, দাঁড়ানো বা মাথা নাড়ানো- এগু'লি একটু ধীরে ধীরে করা ভালো।
'' মাথা খুব তাড়াতাড়ি নাড়ানো, ঝাঁকানো এ ক্ষেত্রে উচিৎ নয়।
'' সিঁড়ি দিয়ে উপরে ওঠা বা নিচে নামা'র ক্ষেত্রে রেলিং ব্যবহার করা জরুরি।
'' খুব জোরে চলে এমন কোনও গাড়িতে না ওঠা ভালো।
'' খালি পেটে না থাকা চে'ষ্টা করা এবং অবশ্যই ডায়েটে নজর দেওয়া প্রয়োজন।