
প্রতিটি প্রাণীরই প্রজাতি টিকিয়ে রাখার একটি মৌলিক তাগিদ থাকে। আর সকল প্রাণীর প্রজাতি টিকিয়ে রাখা বা বংশ বৃ'দ্ধি করার এখন পর্যন্ত একমাত্র প'দ্ধতি প্রজনন প্রক্রিয়া । তাহলে প্রজনন স্বাস্থ্য বি'ষয়টি প্রাণী থেকে শুরু করে মানুষ পর্যন্ত সকলের কাছে গু'রুত্বপূর্ণ। পাঠক, আমা'দের এবারের মূল আলোচ্য বি'ষয় মানুষের যৌ'নজীবন। অন্যান্য প্রাণীর মতো মানুষের যৌ'নতাও কেবল তার জৈ'বিক চাহিদা, শারীরিক ঐশ্বর্য এবং বংশধা'রাকেই শুধু সমুন্নত রাখে না, বরং এটি পরস্পরের মধ্যে একটি আন্তঃসম্পর্ক তৈরি করে থাকে।
জীববিদ্যা, মনোবিদ্যা, সামাজিক-সংস্কৃতিসহ সকল গবেষণা তথ্য থেকেই জানা যায়, যৌ'নতা মানবজীবন ও মনের ওপর প্রভাব সৃ'ষ্টি করে থাকে। তাই নিঃসন্দে'হে বলা যায়, মানুষের মনোজগতের ওপরেও রয়েছে যৌ'নাচরণের ব্যাপক ভূমিকা। আধুনিক বিশ্বে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থার পাঠ্যসূচিতে প্রজনন স্বাস্থ্য ব্যাপক গু'রুত্বসহকারে আলোচিত হচ্ছে। বর্তমান ও ভবি'ষ্যতের মানুষের সুস্বাস্থ্য থেকে শুরু করে সামাজিক সুশৃঙ্খলতা বজায় রাখতে হলে প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান ও বোধ থাকা জরুরি।
কিন্তু আমা'দের দেশের চিত্রটা অন্যরকম। আমা'দের মাঝে অনেকেই আছেন, যারা যৌ'নস্বাস্থ্য সসম্পর্কে অজ্ঞ বা পর্যা'প্ত জ্ঞান রাখেন না। তাই অনেক ক্ষেত্রে কেবল যৌ'নকর্মকেই তাদের নিকট যৌ'নস্বাস্থ্য বলে মনে হয়। আসলে যৌ'নস্বাস্থ্য সম্পূর্ণ একটি স্বাতন্ত্র্য বি'ষয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, যৌ'নস্বাস্থ্যের বিশেষণ হলো— দৈহিক আবেগ এবং নারী-পু’রুষ উভয়ের যৌ'ন অংশগ্রহণে পরিচালিত হয় এমন একটি কাজ, এবং যার ফলে ব্যক্তিত্ব, যোগাযোগ এবং ভালোবাসা সুদৃঢ় হয়।
যৌ'নধা'রা
ছোটবেলা থেকে আমা'দের অনেকের মনেই X এবং Y ক্রোমোজম সংক্রা'ন্ত অল্পবিস্তর ধারণা থাকে এবং অনেকেই এই সময়ে যৌ'নতা কী এ ব্যাপারে জানতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। অথচ দেখা যায়, অনেক ক্ষেত্রেই তারা সঠিকভাবে যৌ'নতা সম্পর্কে জানতে পারে না। বিভিন্ন প্রয়োজনে পরবর্তী সময়ে তারা সে'ক্স এডুকেশন বা যৌ'নতা সম্পর্কে কিছুটা জ্ঞান লাভ করে। আমা'দের দেশে কিংবা উপমহাদেশের প্রেক্ষাপটে যৌ'নতা সম্পর্কিত বিভিন্ন ভ্রা'ন্তধারণা অনেকেরই আছে। আমা'দের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের বহু অঞ্চলে এই প্রভাব একটু বেশি। এখানে উল্লেখ্য যে, যৌ'নতার ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করে থাকে লিঙ্গ অর্থাৎ নারী এবং পু’রুষ।
জীববিদ্যা সম্পর্কিত বিভিন্ন ব্যাখ্যার মাধ্যমেও আমর'া যৌ'নতা সম্পর্কিত স্বল্পবিস্তর ধারণা লাভ করতে পারি। আমি এই আলোচনায় যৌ'নতা এবং যৌ'নজীবন সম্পর্কিত কয়েকটি বি'ষয়ে আলোকপাত করার চে'ষ্টা করব।
মানব মনের যৌ'ন সাড়া
মাস্টার ও জনসন নামের দুইজন বিখ্যাত গবেষক এবং বিজ্ঞানী মনোদৈহিক এবং যৌ'নাচরণের ওপর প্রথমে গবেষণা করেন। তাদের মতে, মানুষের যৌ'নানুভূ'ত ি জাগাতে বা যৌ'নতার অনুভূ'ত ি এবং তৎসম্পর্কিত যৌ'ন উদ্দীপনা এবং চরমপুলকের বি'ষয়টি মূলত যৌ'ন ইন্দ্রিয়কে উদ্দীপিত করার ফলেই ঘটে থাকে এবং মানুষের মস্তিষ্ক এই বি'ষয়ে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করে।
নারী এবং পু’রুষের যৌ'ন উদ্দীপনা একই সাথে শুরু হয় না। নারীর উদ্দীপনা পু’রুষের চেয়ে লঘু এবং ধীরগতিতে সৃ'ষ্টি হয়ে পরবর্তী সময়ে সেটা অতিরিক্ত সময় স্থায়ী 'হতে পারে। আমি এখানে বোঝাতে চাচ্ছি, নারীর যৌ'ন সাড়া সৃ'ষ্টি হলে সেটার স্থায়িত্ব পু’রুষের উদ্দীপনা স্থায়িত্বের চেয়ে বেশি স্থায়ী হয়। পু’রুষ এবং নারীর যৌ'ন উদ্দীপনার জন্য কয়েকটি ইন্দ্রিয় বা যৌ'নাঙ্গ ব্যাপকভাবে কাজ করে।
পু’রুষের প্রধান যৌ'নাঙ্গ হলো তার লিঙ্গ এবং এটি পু’রুষের বাহ্যিক এবং প্রধান যৌ'নাঙ্গ। নারীর মতো পু’রুষের অন্তর্গত কোনো যৌ'নাঙ্গ নেই। পু’রুষের অণ্ডথলিতে বীর্য এবং শুক্র উৎপন্ন হয়। দৈহিক মিলনের সময় এই শুক্র বীর্যের মাধ্যমে পু’রুষের লিঙ্গ থেকে বের হয়ে আসে এবং পু’রুষ চরমপুলক লাভ করে।
সাধারণত লিঙ্গের আকার নিয়ে সবসময়ই বহু পু’রুষকে উদ্বি'গ্ন থাকতে দেখা যায়। অথচ এটি একটি তুলনামূলক অহেতুক এবং অনর্থক যৌ'নচিন্তা। পু’রুষের লিঙ্গের সাইজ বিশেষ করে সার্কভুক্ত এশিয়া অঞ্চলে পু’রুষের লিঙ্গের গড় দৈর্ঘ্য ৫ থেকে সাড়ে ৫ ইঞ্চি। তবে অনেকের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম 'হতে পারে যেমন—কারো কারো লিঙ্গের দৈর্ঘ্য ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি আবার অনেকের লিঙ্গের দৈর্ঘ্য ৪ থেকে সাড়ে ৪ ইঞ্চি 'হতে পারে। মনে রাখবেন উভয় প্রকার লিঙ্গ দ্বারাই সফল যৌ'নমিলন ঘটানো সম্ভব। পু’রুষের উত্তেজনার মূল কেন্দ্রস্থল হলো তার লিঙ্গ। লিঙ্গের উত্থানই পু’রুষের মূল যৌ'নশক্তি।
নারীর বাহ্যিক যৌ'নাঙ্গ এবং অন্তর্গত যৌ'নাঙ্গ রয়েছে। বাহ্যিক যৌ'নাঙ্গের মধ্যে নারীর ক্লাইটোরিস বা ভগাঙ্কুর সবচেয়ে বেশি যৌ'ন স্পর্শকাতর অঙ্গ। পু’রুষ যৌ'নমিলন পূর্বে নারীর এই যৌ'নাঙ্গ স্পর্শের মাধ্যমে নারীকে যৌ'নকাতর করে তুলতে পারে। পু’রুষ এবং নারী উভয়েরই যৌ'ন উত্তেজনার সময়ে তাদের র'ক্তচাপের পরিমাণ বেড়ে যায়। পু’রুষের ক্ষেত্রে হার্টবিট, হৃদস্পন্দন প্রতি মিনিটে ১০০ থেকে ১৭৫ এবং নারীর ক্ষেত্রে সেটা প্রতি মিনিটে ৮০ থেকে ১৫০ পর্যন্ত উঠতে পারে।
পু’রুষ এবং নারীর যৌ'থ উত্তেজনার শেষ পর্যায় হলো চরমপুলক। এ সময়ে পু’রুষের বীর্যপাত ঘটে এবং নারী চরমতৃ'প্ত ি বা চরমপুলক লাভ করে। এটি শারীরিকভাবে যৌ'ন টেনশনকে কমাতেও সাহায্য করে। চরমপুলকের সময় পু’রুষ এবং নারীর দৈহিক এবং মানসিক অ'স্থিরতা বেড়ে যায় এবং এটা চরমপুলক লাভের পর একেবারে কমে যায়। তবে সাধারণত যে কয়টি বি'ষয় পু’রুষ এবং নারীর যৌ'নতার জন্য প্রয়োজন তা হলো- উভয়ের যৌ'ন হরমোনের স্বাভা'বিকতা, নারীর যোনির আদ্রতা, পু’রুষের লিঙ্গের দৃঢ়তা এবং সঠিক উত্থান এবং বিশেষ করে উভয়ে উভয়ের প্রতি যৌ'নচাহিদা এবং আকর্ষণবোধ করা।
পু’রুষের যৌ'ন হরমোন হলো টেস্টোস্টেরন এবং নারীর যৌ'ন হরমোন হলো ইস্ট্রোজেন। সাধারণত শেষ রাতের দিকে পু’রুষের যৌ'ন হরমোন সবচেয়ে বেশি মাত্রায় শরীরে অবস্থান করে এবং এ জন্য সকালের দিকে যৌ'ন আকর্ষণ এবং যৌ'নক্ষ'মতা একটু বেশি থাকে।
যৌ'নতা ও বয়স
মধ্য বয়সে এসে পু’রুষ এবং নারী যৌ'নতার প্রতি বেশি আকর্ষণ এবং চাহিদাবোধ করে। কৈশোর পেরিয়ে যৌ'বনপ্রা'প্ত ির পর থেকে নারী এবং পু’রুষ উভয়ে মোটামুটি ৪০-৫০ বছর বয়স পর্যন্ত তারা যৌ'নমিলনে সক্রিয় থাকে। তবে মধ্য বয়সে যৌ'নতার প্রতি আকর্ষণ থাকে তুলনামূলকভাবে বেশি। নারীর মেনোপজের সময় তার রজঃনিবৃত্তির সূচনা হয়। এটি অনেক নারীকেই যৌ'নতার প্রতি উদাসীন করে তোলে। আমা'দের দেশে প্রায় ক্ষেত্রে ৪৫ বছরের পর নারীদের যৌ'নভাবে নিষ্ক্রিয় দেখা যায়। পু’রুষের ক্ষেত্রে এই সময়ের কাছাকাছি বা ৫০ বছর বয়সের পরেও যৌ'নভাবে সক্ষ'ম থাকতে দেখা যায়। মানুষের বয়স বাড়ার সাথে সাথে যৌ'ন ইচ্ছার কমতির কারণ হলো যৌ'ন হরমোন কমে যাওয়া।
তবে নানাবিধ শারীরিক এবং মানসিক কারণেও পু’রুষ এবং নারীর যৌ'ন ইচ্ছা এবং যৌ'নশক্তি কমে যেতে পারে। আর্থ্রাইটিস, উচ্চর'ক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং ক্যান্সার জাতীয় শারীরিক অ'সুস্থতা যৌ'নতার ওপর প্রভাব ফেলে। তেমনি নানাবিধ মানসিক অ'সুস্থতাও যৌ'ন ইচ্ছা ও ক্ষ'মতাকে ন'ষ্ট করে দিতে পারে এবং যে সমস্যায় পু’রুষ ও নারী উভয়ই আ'ক্রা'ন্ত 'হতে পারে।
রকমা'রি যৌ'নতা
শুধু আমা'দের দেশ এবং সমাজেই কেবল নয় বরং সমগ্র পৃথিবীজুড়েই রকমা'রি যৌ'নতা পরিলক্ষিত হয়। যৌ'নতা উপভোগের নানারকম কলাকৌশলেরই আরেকটি নাম হলো রকমা'রি যৌ'নতা। বিভিন্ন দেশে বা সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে যৌ'নতা উপভোগের বিভিন্ন পন্থা প্রচলিত রয়েছে। মানুষের যৌ'নাচরণের বিভিন্ন রকম পার্থক্য তাদের শারীরিক এবং মানসিক বিভিন্ন কারণে ঘটতে পারে। তবে পাশ্চাত্যে নানাবিধ সাইকোলজিক্যাল বিহেভিয়ার প'দ্ধতি রয়েছে, যেটা তাদের যৌ'নতা উপভোগের ক্ষেত্রে সহায়তা করে থাকে।
যৌ'ন সংস্কৃতি একেকজনের কাছে একেকরকম 'হতে পারে। অনেকেই নানাকারণে যৌ'নতায় ভিন্নতা অবলম্বন করে থাকেন, যে কারণে আমর'া বিভিন্ন প্রকার যৌ'নাচরণ দেখতে পাই। বিভিন্ন দেশে কিংবা আমা'দের দেশেও সমকামী পু’রুষ এবং নারী, বিপরীতকামী পু’রুষ এবং নারী, উভকামী পু’রুষ এবং নারীর দিকে লক্ষ্য করলে দেখতে পাই তাদের বৈচিত্র্যপূর্ণ শারীরিক ও মানসিক কারণে নানা প্রকার যৌ'ন আচরণের সাথে সম্পৃক্ত।
সমকামী পু’রুষ কিংবা সমকামী নারী মূলত যৌ'নতার বৈচিত্র্যের জন্য এবং বিশেষ মানসিকতার জন্য এই জাতীয় যৌ'নতার প্রতি আকর্ষিত হয়ে পড়ে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে পু’রুষ কিংবা নারী একাধারে পু’রুষ এবং নারী উভয়ের সাথেই যৌ'নমিলনে রত হচ্ছে। এই জাতীয় যৌ'নাচরণকে উভকামিতা বলে।
পাশ্চাত্যে সমকামী পু’রুষদের ‘গেই’ এবং নারীদের ‘লেসবিয়ান’ নামে অ'ভিহিত করা হয়।
এগু'লো ছাড়া আরও নানা ধরনের অদ্ভুত যৌ'নাচরণও রয়েছে। যেমন— জুফিলেস (Zoophiles) অর্থাৎ পশু-পাখির সাথে যৌ'নমিলন, ফেটিসিজম (Fetishism), নেকরোফিলিয়া (Necrophilia) এবং ভয়েরিজম (Voyeurism) ই'ত্যাদি। এ ছাড়াও পরিবার-পরিজন এবং নিকট আ'ত্মীয়ের সাথে যৌ'নমিলনকে ইনসেস্ট (Incest) বলে। যেমন— বাবা মেয়ের সঙ্গে যৌ'নতা, চাচা ভাইঝির সাথে যৌ'নতা ই'ত্যাদি।
আরেক প্রকার 'বিকৃত যৌ'নাচরণ রয়েছে, যাকে স্যাডিজম বলা হয় (Sadism)। এই যৌ'নতায় যারা আ'ক্রা'ন্ত তাদের মাঝে যৌ'নতার সময় অ’পরকে ব্যথা দেওয়ার প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়। আবার ঠিক এর উল্টোটিও আছে একে বলে ম্যাসোকিজম (Masochism)। এখানে আবার যৌ'নতায় নিজে ব্যথা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকে। এই জাতীয় যৌ'নাচরণকে অ'সুস্থ যৌ'ন মানসিকতা বলাই শ্রেয়।
স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বি'ষয়ের সাথে অ'সুস্থতার বি'ষয়টি যেমন জড়িত থাকা স্বাভা'বিক, তেমনি যৌ'নতার সাথেও অ'সুস্থতার একটি স্বাভা'বিক সম্পর্ক রয়েছে। নানাবিধ পারিপার্শ্'বিক কারণে যৌ'ন অ'সুস্থতা দেখা দিতে পারে। যেমন— জীববিদ্যা সম্পর্কিত সমস্যা, ব্যবহারিক সমস্যা এবং সামাজিক ও পরিবেশগত সমস্যার প্রভাব ই'ত্যাদি। যৌ'ন নান সমস্যা কিংবা অ'সুস্থতার জন্য শারীরিক এবং মানসিক কিছু কারণও দায়ী 'হতে পারে।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে পেরিফেরাল স্নায়ু ব্যবস্থা, কার্ডিওভাসকুলার ব্যবস্থা এবং যৌ'নাঙ্গের সমস্যার কারণে যৌ'ন ক্রিয়াকর্মে বিঘ্ন সৃ'ষ্টি 'হতে পারে। নারী-পু’রুষ উভয়ের ক্ষেত্রে যৌ'নতার প্রতি ভীতি সমস্যার কারণে যৌ'নতায় অ'সুস্থতা সৃ'ষ্টি 'হতে পারে।
অ'সুস্থতাজনিত যৌ'ন সমস্যা
কেন্দ্রীয় এবং পেরিফেরাল স্নায়ু ব্যবস্থার ত্রুটি, স্পাইনাল কর্ডের আঘা'ত এবং টিউমা'রের কারণে যে সব সমস্যা সৃ'ষ্টি 'হতে পারে যেমন—
লিঙ্গ উত্থানে সমস্যা
লিভার সিরোসিস, এমাইওট্রোফিক ল্যাটাবলি ইসক্লোরোসিস, যৌ'ন ইচ্ছা এবং ক্ষ'মতাকে বিঘ্নিত করে ফ্রন্টাল অথবা টেম্পোরাল লবের টিউমা'র।
প্রোস্টেটেকটোমির ফলে স্নায়ুবৈকল্য দেখা দেয়। যার ফলে যৌ'ন ইচ্ছা কমে যায়
লাম্বার সিমপ্যাথেস্টমি
ইপিসিওটোমি অবসটেট্রিক্যাল ট্রাউমা, যোনির অভ্যন্তরে লিঙ্গ প্রবেশের সমস্যা এবং কামর'স নিঃসরণে সমস্যা তৈরি করে।
ডরজোটোমির ফলে পু’রুষত্বহীন সমস্যা সৃ'ষ্টি 'হতে পারে।
ডলভার সিরোসিস ও ইস্ট্রোজেন সমস্যা এবং এ জন্য যৌ'ন সমস্যা সৃ'ষ্টি 'হতে পারে।
ডায়াবেটিস সমস্যার ফলে পু’রুষ এবং নারীর যৌ'নজীবনে নানা যৌ'ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
পু’রুষের যৌ'ন সমস্যা একটি ব্যাপক ও গভীর মনোদৈহিক জটিল অবস্থা। তাই কোনো সহজ-সরল প'দ্ধতিতে অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসা করা সম্ভব নাও 'হতে পারে। সমস্যাগু'লোর মূলে মানসিক, দৈহিক ও হরমোনজনিত তারতম্য ব্যাপকভাবে সংশ্লি'ষ্ট থাকে। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে সবকটি একই সাথে জড়িত থাকে। অতএব, পু’রুষের যৌ'ন সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে প্রথমেই মূল কারণটাকে শনাক্ত করতে হবে। তার পর সাধ্যের মধ্যে হলে তার সমাধান করতে হবে। যৌ'নতা মানুষের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। কোনোমতেই তা অ'স্বীকার করার উপায় নেই। যৌ'নতার প্রতি আকর্ষণ এবং যৌ'নক্ষ'মতা অনেক সময় নানা পারিপার্শ্'বিক কারণে বিঘ্নিত 'হতে পারে। পু’রুষ এবং নারীর নানাবিধ এবং ব্যতিক্রমী যৌ'ন সমস্যা এবং যৌ'ন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত অ'সুবিধা দেখা দিলেও এগু'লোর চিকিৎসা এবং সমাধানের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে তা গ্রহণের মানসিকতা থাকতে হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পু’রুষ এবং নারী যৌ'ন অ'সুবিধা থাকা সত্ত্বেও ডাক্তারের পরামর'্শ গ্রহণ করতে সংকোচবোধ করেন। এতে করে তাদের শারীরিক সমস্যা বাড়তে পারে এবং যৌ'নজীবনে এর প্রচণ্ড প্রভাব পড়তে পারে।
পু’রুষের যৌ'ন সমস্যার মধ্যে অন্যতম হলো, দ্রুত বীর্য স্খলন (Premature Ejaculation)। তার পরই আছে লিঙ্গ উত্থানজনিত সমস্যা (Erectile Dysfunction), যৌ'ন আগ্রহ কমে যাওয়া ই'ত্যাদি। পৃথিবীর বহুদেশে এ সমস্যাসমূহ নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হয়েছে। আমা'দের দেশেও অল্প বিস্তর গবেষণা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত যেসমস্ত কারণ বা ঝুঁকি শনাক্ত হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে গু'রুত্বপূর্ণ হলো, ডায়াবেটিস, উচ্চর'ক্তচাপ, র'ক্তনালী সরু হয়ে যাওয়া, র'ক্তে লিপিড সমস্যা, হরমোনজনিত সমস্যা (হাইপোগোনাডিজম, হাইপারপ্রোলেকটিনোমা), ধূমপান, অতিরিক্ত ম'দ্যপান, যৌ'নাঙ্গে আঘা'ত বা অ’পারেশন, ওষুধ সেবন (উচ্চর'ক্তচাপ বা মানসিক অবসাদের), যৌ'নাঙ্গের সংক্রমণ, স্নায়ু'বিক সমস্যা ই'ত্যাদি। তবে এখন পর্যন্ত পু’রুষের যৌ'ন সমস্যার সবমিলিয়ে প্রধানতম সমস্যা হিসেবে পু’রুষটি বা উভয়ের মানসিক সমস্যাকেই প্রধানতম বলে ধ’রা হচ্ছে। একইভাবে পু’রুষ ও তার যৌ'ন সঙ্গীর অ'সৌহার্দপূর্ণ অবস্থাও ব্যাপক প্রভাব ফেলে।
অতএব, পু’রুষের যৌ'ন সমস্যা সমাধান কল্পে সমাধান প্রার্থীর শারীরিক, মানসিক ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার বিস্তারিত ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে চিকিৎসককে জানতে হবে। একই সাথে সমস্যাটির মোট স্থায়িত্বকাল, ব্যাপকতা ও ধরন সুনির্দি'ষ্টকরণ করতে হবে। আ'ক্রা'ন্ত পু’রুষ মানুষটির স্ত্রী বা যৌ'ন সঙ্গীর শারীরিক উপস্থিতি সমস্যাটির সঠিক অবস্থা বুঝতে সহায়ক হবে। তার পর অন্যান্য রোগের উপস্থিতি, ওষুধ গ্রহণ ই'ত্যাদি বিস্তারিত জানতে হবে। সমস্যাটির ধরন নিশ্চিত হবার পরে চিকিৎসার ধরন ঠিক করতে হবে। তবে আগে থেকেই বলে রাখা ভাল যে, সবার ক্ষেত্রে ফলাফল আশানুরূপ নাও 'হতে পারে। তবে যাদের একই সাথে অন্য কোনো রোগ আছে, তাদের সেই সমস্যা সমাধান করা গেলে যৌ'ন সমস্যারও যথে'ষ্ট উন্নতি হবার সম্ভাবনা থাকে। যেমন—ডায়াবেটিক রোগীদের র'ক্তের গ্লুকোজ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় রাখা অবশ্যই জরুরি। আবার কোনো ওষুধকে যদি এ সমস্যার কারণ মনে করা হয়, তবে তা বন্ধ করতে হবে দ্রুত।
চিকিৎসক রোগীর অবস্থা বিবেচনা করে কিছু সংখ্যক পরীক্ষা করতে পারেন। এর মধ্যে হরমোনের মাত্রা নির্ধারণ (থায়রয়েড হরমোন, টেস্টোস্টেরন, প্রোলেকটিন ই'ত্যাদি), র'ক্তে চর্বির মাত্রা, পু’রুষ লিঙ্গে র'ক্ত সরবরাহের পরিমাণ বা ধরন নির্ধারণ ই'ত্যাদি। আবার অনেকের ক্ষেত্রে তলপেটের আল্ট্রাসনোগ্রাম বা যৌ'নাঙ্গের সংক্রমণের পরীক্ষাও করা হয়। তবে ডায়াবেটিসের পরীক্ষা সবার আগে থাকবে।
পু’রুষের যৌ'ন সমস্যার ধরন বা কারণ নির্ধারিত হবার পরে চিকিৎসক তার চিকিৎসা প'দ্ধতি ঠিক করবেন। এক্ষেত্রেও আ'ক্রা'ন্ত পু’রুষটির মানসিক অবস্থার উন্নতিই অগ্রগণ্য। তার পর তার যৌ'ন সঙ্গীর সাথে উষ্ণ সম্পর্ক তৈরির তাগিদ দিতে হবে। এমনও দেখা গেছে, যৌ'ন সঙ্গী পাল্টানোর পর আ'ক্রা'ন্ত পু’রুষটি এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
যাদের ডায়াবেটিস আছে, তারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। তাদের অবশ্যই দ্রুত ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞের পরামর'্শ মতো বয়স ও অবস্থাভিত্তিক কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারতে হবে এবং তা বজায় রাখতে হবে।
যাদের কোনো হরমোনজনিত সমস্যা আছে, তাদের সে সমস্যা সমাধানের জন্য সাধারণত কোনো হরমোন সেবন করতে দেওয়া 'হতে পারে। এ ব্যাপারে অবশ্যই একজন হরমোন বিশেষজ্ঞের পরামর'্শ নিতে হবে। কেননা, এ সব কারণ শনাক্তকরণ, প্রয়োজনীয় হরমোন নির্ধারণ করা, হরমোনের মাত্রা বা ডোজ ঠিক করা অথবা একাধিক হরমোন দিতে হলে তার সমন্বয় করা ই'ত্যাদি কাজের জন্য অবশ্যই একজন হরমোন বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমা'দের লাজুক রোগীরা আশপাশের বিভিন্ন রকম অ’প্র'শিক্ষিত ওষুধ ব্যবসায়ী বা কবিরাজ অথবা ধর্ম ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তাদের এ রোগ গভীর ও জটিল সমস্যার সহজ সমাধান নিতে গিয়ে অবস্থাটির উন্নতির পথ অনেক ক্ষেত্রেই বন্ধ করে ফেলেন।
কারণভিত্তিক যে সব ওষুধ-পত্র পু’রুষের যৌ'ন সমস্যার ক্ষেত্রে সাধারণত ফলদায়ী হয় তার মধ্যে আছে, সিলদেনাফিল সাইট্রেট, কাদানাফিল, ভারদানাফিল, ডেপক্সেটিন ই'ত্যাদি। তা ছাড়া কিছু কিছু ডিভাইস কার্যকর। তবে সকল ক্ষেত্রেই রোগীর মানসিক অবস্থার উন্নতি জরুরি। কিছু কিছু সে'ক্সচুয়াল থেরাপি অনেক ক্ষেত্রে উপকারী 'হতে পারে। তবে সকল ক্ষেত্রেই জীবনযাপন প্রণালীর বিজ্ঞানভিত্তিক উন্নতি সাধন করতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ খাদ্যভ্যাস 'ত্যাগ করতে হবে। নিয়মিত এবং পরিমিত শারীরিক শ্রম বজায় রাখতে হবে। উচ্চতা অনুসারে কাঙ্ক্ষিত দৈহিক ওজন অবশ্যই ঠিক থাকতে হবে। পু’রুষকে তার নিজের ও তার সঙ্গীর সাথে মধুরতর সম্পর্ক সৃ'ষ্টি ও বজায় রাখতে হবে।
সে'ক্সচুয়াল থেরাপি এবং বিভিন্ন প্রকার মেডিকেশন বা ওষুধ ব্যবহার করে পু’রুষ এবং নারীর যৌ'নজীবনের নানাবিধ সমস্যা মোকাবিলা করা যেতে পারে। আমা'দের দেশে ইদানীং যৌ'নতা বি'ষয়ে অনেক সচেতনতা বৃ'দ্ধি পেয়েছে এটি একটি ভালো খবর। যৌ'ন স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সতর্কতা প্রতিটি সুস্থ-স্বাভা'বিক পু’রুষ এবং নারীর জন্য জরুরি। আমা'দের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্যও যৌ'নতার প্রয়োজন রয়েছে। এটি জীবনের একটি অন্যতম নিয়ামক।
পু’রুষ এবং নারীর ক্ষেত্রে যেকোনো যৌ'ন সমস্যায় অনেকে অযাচিতভাবে এবং ব্যবস্থাপত্রের বাইরে ওষুধ সেবন করে থাকেন। এটি কিন্তু অত্যন্ত ক্ষ'তিকর। যৌ'ন স্বাস্থ্যের স্বয়ংসম্পূর্ণতা বরং এতে আরও ন'ষ্ট হয়। প্রতিটি ক্ষেত্রে উচিত সুস্থতার ব্যাপারে আপনাকে নিশ্চয়তা দিতে পারে। এজন্য যৌ'ন স্বাস্থ্যের কোনো প্রকার সমস্যা দেখা দিলে বরং ডাক্তারের পরামর'্শ গ্রহণ করা উচিত। পাশ্চাত্যে যৌ'নজীবনে বৈচিত্র্য আনয়নে এবং সুস্থ যৌ'নতার জন্য নানাবিধ মেডিকেশন এবং থেরাপির প্রচলন রয়েছে। তবুও চে'ষ্টা করুন সুস্থ-শারীরিক দে'হ-মন নিয়ে যৌ'নতায় লি'প্ত 'হতে।
পু’রুষ এবং নারীর জন্য যৌ'ন স্বাস্থ্যের সুস্থতা অবশ্যই জরুরি এবং প্রয়োজনীয়। ডাক্তারের কাছে বা বিশেষজ্ঞের কাছে আপনার যেকোনো প্রকার শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা, বিশেষ করে যেগু'লো আপনার যৌ'নজীবনের সাথে সম্পৃক্ত সে ব্যাপারে খোলাখুলি আলোচনার মাধ্যমে পরামর'্শ নিন। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের লেখা বিভিন্ন রকম যৌ'নবি'ষয়ক বই পড়েও যৌ'ন সমস্যা সম্পর্কিত জ্ঞান আহরণ করতে পারেন। এতে আপনার যৌ'নতা সম্পর্কিত অজ্ঞতা কে'টে যাব'ে। যৌ'নজীবনে সুখী 'হতে চাইলে যৌ'ন স্বাস্থ্যকে সুস্থ রাখার 'বিকল্প নেই।
তাই আপনার এ বি'ষয়ে অ'ভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর'্শ প্রয়োজন, যে কোনো প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন।
লেখক : ডা. শাহজাদা সেলিম
এমবিবিএস, এমডি (এন্ডোক্রা'ইনোলজি ও মেটাবলিজম), এমএসিই (ইউএসএ)
সহকারী অধ্যাপক, এন্ডোক্রা'ইনোলজি বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়