
গোপ'ন পাপ মানুষের ব্যাপক ধ্বং'স ডেকে আনে। গোপ'নে গু'নাহ করা খুবই জঘন্যতম অ’পরাধ। গোপ'ন গু'নাহ হলো, যে ব্যক্তি প্রকাশ্যে নেক আমল করে, সৎ কাজ করে এবং আল্লাহর সব বিধিবিধান মেনে চলে, কিন্তু গোপ'নে মানুষের আড়ালে গু'নাহে লি'প্ত থাকে।
এমন ধরনের গু'নাহ খুবই ভ'য়াবহ। গোপ'নে গু'নাহগার ব্যক্তি মূলত জেনে-বুঝে গু'নাহে লি'প্ত হয়। আর কেউ যখন জেনে-বুঝে গু'নাহে লি'প্ত হয় তখন তার অন্তর থেকে তাকওয়া তথা আল্লাহর ভয় বিদায় নেয়। অন্তর তাকওয়াশূন্য হয়ে পাথরের মতো শক্ত 'হতে থাকে। ফলে অন্তরে আল্লাহর ভয় জাগ্রত হয় না। মোনাজাতে চোখের পানি আসে না। একপর্যায়ে কোনো আমলেই আর মন বসে না। ইবাদত করতে ভালো লাগে না। কোরআন তেলাওয়াত মধুর লাগে না। এভাবে ক্রমান্বয়ে সে ধ্বং'স ও অধঃপতনের দিকে এগু'তে থাকে। সে বাঁচতে চায়, কিন্তু বাঁচতে পারে না।
পর্যায়েক্রমে তার অবস্থা এতটা ভ'য়ানক হয় যে, সে ঈমানহারা অবস্থায় মৃ'ত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এমন অনেক ঘটনা রয়েছে যে, সারাজীবন নেক আমল করেছে, লোকে তাকে ভালো জানত, কিন্তু মৃ'ত্যুর সময় ঈমান নসিব হয়নি। কেউ কেউ আবার ইসলামকেই অ'স্বীকার করে বসে। পরবর্তীতে অনুসন্ধান করে জানা যায়, মনুষ্যসমাজ তাকে ভালো জানলেও গোপ'নে মা'রাত্মক ধরনের গু'নাহে লি'প্ত ছিল সে।
গোপ'ন গু'নাহের উপাদান:
বর্তমানে গোপ'ন গু'নাহের উপাদান অত্যধিক। হাতের কাছে, বালিশের পাশে গু'নাহের অ'সংখ্য বস্তু। আধুনিক পৃথিবীতে প্রযুক্তির সয়লাবের পাশাপাশি গু'নাহের সয়লাবও হয়েছে। যেখানে গু'নাহ করলে কেউ কিছু জানতে পারে না। শয়তানের প্ররোচনায় অনেক বড় পরহেজগার মুত্তাকি কঠিনতম গু'নাহে লি'প্ত হয়ে যায়। ইন্টারনেট গু'নাহের রাশি রাশি উপাদেয় হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। প্রযুক্তির ভালো দিক যেমনি রয়েছে তেমনি অ’শ্লী'ল গান, মুভি, প'র্ন ই'ত্যাদি খারাপের দিকও ঢের কম নয়। তাই গোপ'ন গু'নাহের আশ'ঙ্কা থেকে খুব অল্প মানুষই নিরাপ'দ!
গোপ'ন গু'নাহের ভ'য়াব'হতা:
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমি আমা'র উম্মতের কতক দল সম্পর্কে অবশ্যই জানি, যারা কিয়ামতের দিন তিহামা'র শুভ্র পর্বতমালা সমতুল্য নেক আমল নিয়ে উপস্থিত হবে। কিন্তু মহামহিম আল্লাহ সেগু'লোকে 'বিক্ষি'প্ত ধূলিকণায় পরিণত করবেন। সাওবান (রা.) বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল, তাদের পরিচয় পরিষ্কারভাবে আমা'দের নিকট বর্ণনা করুন, যাতে অজ্ঞাতসারে আমর'া তাদের অন্তর্ভুক্ত না হয়ে যাই। তিনি বললেন, তারা তোমা'দেরই ভ্রাতৃগোষ্ঠী এবং তোমা'দের সম্প্রদায়ভুক্ত। তারা রাতের বেলা তোমা'দের মতোই ইবাদত করবে। কিন্তু তারা এমন লোক, যারা একান্ত গোপ'নে আল্লাহর হারামকৃত কর্মে লি'প্ত হবে।’ (ইবনে
মাজা : ২/১৪১৮)
ইবনে রজব হাম্বল (রহ.) বলেন, বান্দার গোপ'ন গু'নাহ ও অবাধ্যতার কারণে মন্দ মৃ'ত্যু হয়ে থাকে, যা মানুষ জানে না; চাই তা খারাপ কোনো আমল হোক বা অন্য কিছু। তার এ গোপ'ন চরিত্রই তার মন্দ মৃ'ত্যুর কারণ হয়।’ (জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম: ১/১৭২)।
হজরত ইবনুল জাওযি (রহ.) বলেন, গু'নাহ থেকে পরিপূর্ণরূপে বেঁচে থাকো; বিশেষত গোপ'ন গু'নাহ থেকে। কেননা, আল্লাহর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা বান্দাকে তার নজর থেকে ফেলে দেয়। আল্লাহ ও তোমা'র মাঝে গোপ'নীয় বি'ষয় সংশোধন কর; তাহলে তিনি তোমা'র বহিরাগত বি'ষয় সংশোধন করে দেবেন।’ (সাইদুল খাতির : ২০৭) শায়খ ইবনুল আরাবি বলেন, সবচেয়ে নিকৃ'ষ্ট ও ক্ষ'তিগ্রস্ত সে-ই, যে মানুষের সামনে ভালো আমল করে, কিন্তু যে মহান সত্তা তার শাহরগ থেকেও অধিক নিকটবর্তী, তার সামনে বদ আমল করে। (তারিখু দিমাশক : ৫/৩৫৬)
গোপ'ন গু'নাহ থেকে বাঁ'চার উপায়:
১. সর্বদা এ কথা অন্তরে জাগ্রত রাখা যে, আল্লাহ আমাকে পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি আমাকে সর্বদাই দেখছেন। আমি যা করি, আমা'র প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহর সামনে। এ ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমা'দের ওপর পর্যবেক্ষক।’ (সুরা নিসা : ১)
২. অন্তরের সঙ্গে মুজাহাদা করা, তার কুমন্ত্রণা দূর করা এবং আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমে অন্তরকে পরিশু'দ্ধ করার চে'ষ্টা করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, শপথ প্রাণের এবং যিনি তা সুবিন্যস্ত করেছেন, তার। অতঃপর তাকে অ'সৎকর্ম ও সৎকর্মের জ্ঞান দান করেছেন। যে নিজেকে পরিশু'দ্ধ করে, সেই সফলকাম হয়। আর যে নিজেকে কলুষিত করে, সে ব্য'র্থ মনোরথ হয়। (সুরা শামস : ৭-১০)
৩. যে রাস্তাগু'লো গু'নাহের দিকে ধাবিত করে, সে রাস্তাগু'লো বন্ধ করে দেওয়া। তা এভাবে যে, একাকী না থাকা; বরং সবসময় অন্যদের মাঝে থাকা। পরিবার-পরিজন, স্ত্রী ও সন্তানদের মাঝে থাকা। যদি স্ত্রী থেকে দূরে থাকেন তাহলে স্ত্রীকে সঙ্গে রাখার সর্বোচ্চ চে'ষ্টা করা। আপনার স্ত্রীর মাধ্যমে নিজেকে পবিত্র রা খু'ন এবং আপনার মাধ্যমে আপনার স্ত্রীকেও পবিত্র রা খু'ন। আর যদি আপনি আপনার পরিবারের কাছেই থাকেন এবং তাদের সঙ্গে বসবাস করেন তাহলে আপনি তাদের থেকে দূরে যাব'েন না। আপনি আপনার স্ত্রীকে ভালোবাসুন। তার মাধ্যমে আপনার প্রয়োজন পূরণ করুন। যখনই আপনার অন্তরে দেখার খায়েশ জাগবে কিংবা কোনো কিছু আপনার নজরে পড়ে যাব'ে তখনই আপনি শয়তানকে হারামের দিকে আপনাকে নিয়ে যেতে দেবেন না। বরং আপনি দেরি না করে হালালকে গ্রহণ করুন।
৪. সদা-সর্বদা দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণকর কোনো কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখা। কারণ অবসর সময় মানুষের ন'ষ্টের কারণ। এমন ন'ষ্ট যার কোনো সীমা নেই।
৫. আল্লাহ তাআলার কাছে বেশি বেশি কান্নাকাটি করে দোয়া। তিনি যেন তার অবাধ্যতা, নাফরমানি ও সব ধরনের গু'নাহ থেকে রক্ষা করেন।
৬. কিয়ামতের দিন গোপ'ন গু'নাহকারীদের আমলগু'লো ধূলিকণার মতো উড়িয়ে দেওয়ার কথা চিন্তা করা। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, মহানবী (সা.) বলেন, ‘আমি আমা'র উম্মতের কিছু মানুষ সম্পর্কে জানি, যারা কিয়ামতের দিন তিহামা'র (বিখ্যাত পাহাড়) শুভ্র পর্বতমালা সমতুল্য নেক আমল নিয়ে উপস্থিত হবে। কিন্তু আল্লাহ সেগু'লোকে 'বিক্ষি'প্ত ধূলিকণায় পরিণত করবেন। সাওবান (রা.) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! তাদের পরিচয় পরিষ্কারভাবে আমা'দের কাছে বর্ণনা করুন, যাতে অজ্ঞাতসারে আমর'া তাদের অন্তর্ভুক্ত না হই। তিনি বললেন, তারা তোমা'দেরই ভ্রাতৃগোষ্ঠী এবং তোমা'দের সম্প্রদায়ভুক্ত। তারা রাতের বেলা তোমা'দের মতোই ইবাদত করবে। কিন্তু তারা এমন লোক, যারা একান্ত গোপ'নে আল্লাহর হারামকৃত কর্মে (গোপ'ন গু'নাহ) লি'প্ত হবে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৪১৮)
৭. গু'নাহ করার সময় এ কথা চিন্তা করা, কেউ কি দেখলে আমি এমন গু'নাহ করতে পারতাম? এভাবে নিজের ভেতরের ল'জ্জাবোধ জাগ্রত করা। এ বি'ষয়ে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তুমি তোমা'র পরিবারের কোনো প্রভাবশালী সদস্যকে যেমন ল'জ্জা পাও, আল্লাহকে (কমপক্ষে) তেমন ল'জ্জা করো।’ (মুসনাদুল বাজ্জার : ৭/৮৯)
৮. এ চিন্তা করা, গু'নাহরত অবস্থায় যদি আমা'র মৃ'ত্যু হয়, তাহলে কিভাবে আমি আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করব? মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘প্রত্যেক ব্যক্তিকে (কিয়ামতের দিন) ওই অবস্থায় ওঠানো হবে, যে অবস্থায় সে মৃ'ত্যুবরণ করেছে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২২০৬)
৯. অবসরে জিকির ও ফিকিরে থাকার চে'ষ্টা করা। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আকাশ ও পৃথিবীর সৃ'ষ্টিতে, দিবস ও রাত্রির পরিবর্তনে নিদর্শনাবলি রয়েছে বোধশক্তিসম্পন্ন মানুষের জন্য। যারা দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে আল্লাহকে স্মর'ণ করে এবং আকাশ ও পৃথিবীর সৃ'ষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করে আর বলে, হে আমা'দের রব! আপনি এগু'লো নিরর্থক সৃ'ষ্টি করেননি। আপনি পবিত্র। আপনি আমা'দের জাহান্নামের শা'স্তি থেকে রক্ষা করুন।’ (সুরা : আলে ইমর'ান, আয়াত : ১৯০-১৯১)।
১০. বেশি বেশি আল্লাহর নিকট দোয়া করা। যেন আল্লাহ নাফরমানি ও সব গু'নাহ থেকে হেফাজত করেন। শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে হেফাজত করেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর আমা'র বান্দারা যখন তোমা'র কাছে জিজ্ঞেস করে আমা'র ব্যাপারে; বস্তুত আমি তো রয়েছি সন্নিকটেই। যারা প্রার্থনা করে, তাদের প্রার্থনা কবুল করি, যখন তারা আমা'র কাছে প্রার্থনা করে। কাজেই আমা'র হুকুম মান্য করা এবং আমা'র প্রতি নিঃসংশয়ে বিশ্বা'স করা তাদের একান্ত কর্তব্য, যাতে তারা সৎপথে আসতে পারে।’ (সুরা বাকারা' : ১)
মহান আল্লাহ আমা'দের গোপ'ন গু'নাহ থেকে বাঁ'চার তৌফিক দান করুন। আমিন।